সিলেটনামা

syedfromsylhet
3 min readNov 6, 2020

জুম্মার নামাজ পড়ে আজকে খুব সিলেটকে মিস করছিলাম। কৌতুক এর ছলে বোনকে বলছিলাম আম্মুকে কমপ্লেন করব যে বিরিয়ানি, বোরহানি খাইতে দিচ্ছে না আপু। (যদিও বাঙ্গালি খাবার খাওয়ানোতে কোন কমতি রাখে নাই আমার বোন এবং দুলাভাই)

ছবিতে যেই লকেট দেখছেন, তা না হলেও ৩ বার পোস্ট দিসি ইন্সটাগ্রামে। জন্মদিনের অগ্রীম গিফট হিসেবে বোনের কাছ থেকে পেয়েছি। এর থেকে ভালো উপহার এইবার কেউ দিতে পারবে না — যদিনা মিরাকুলাসলি কেউ আমার আব্বুর হারিয়ে যাওয়া হায়দারাবাদ ট্র্যাজেডি বইটা আমাকে দিতে পারেন বা সিলেটে আমার টেবিলে পরে থাকা আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী সাহেবের হলি কোরআন সমগ্র কেউ এনে দিতে পারেন।

২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে যাচ্ছি দেখে অনেকে ভয় পাচ্ছিলেন। কি ভাগ্য, দেশে গিয়েই বোঝা গেল সিভিয়ার ডিপ্রেশন সহ নানা মানসিক রোগে ভুগছিলাম। দেশে তখন না গেলে অবস্থা খুবই বেগতিক হত।

২০১৭ সালে সিলেট ছাড়ার সময় আমার প্রিয় ছোট চাচার সামনে যতটা কেদেছিলাম, ছোট্ট লাইফে এখনও এতো কান্নাকাটি করি নাই। যেই দেশের উপর অনেকটা রাগ করেই আমেরিকায় এসেছিলাম, সেই দেশে ফেরত গিয়েই সুস্থ হলাম। পরিবারের মানুষদের চিন্তাধারার সাথে ভিন্নতা ছিল দেখে দূরে চলে গিয়েছিলাম, তারাই আমার খেয়াল নিল দিনরাত। যেই টিলাগড় জামে মসজিদের ইমামের সাথে আমার তর্ক হত নামাজ পড়ার স্টাইল নিয়ে, তিনিই একদিন আসরের নামাজ শেষে আমার হাত ধরে দোআ করলেন আর বললেন, আসতাগফিরুল্লাহ জপেন — মনে শান্তি পাবেন। পাড়ার যেই আন্টিকে হয়ত ২/৩ বার দেখেছি, তিনিই আমার জন্য নফল রোযা রেখে দোআ করলেন। আমার ছোটবেলায় লালন পালন করা আলিম ভাই, নুরুল ভাই, বেলাল, বাসার হাউজহোল্ড হেল্পরাই কান্নাকাটি করে আমার জন্য একের পর এক সাহায্যে এগিয়ে এলো। সেলাই মেশিনের মতো ছোট্ট একটা জিনিস এক আপুকে আমরা বন্ধুরা মিলে কিনে দিয়েছিলাম — তিনিই আমার প্রিয় হান্দেশ পিঠা নিজ হাতে বানিয়ে পাঠালেন। যেই বন্ধুদের সাথে মাসের পর মাস কথা হতো না, তারাই আমার অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে আসলো। যেই ভাইয়ের সাথে খাতির অনেকটাই কমে গিয়েছিল, সেই ভাই-ই আমাকে গোসল করিয়ে দিত কারন আমি নিজে এই ছোট্ট জিনিসটাই করতে পারতাম না। মামা-মামি, খালা-খালু, চাচা-চাচী, ফুফু-ফুফা, কাজিনদের ভালোবাসা ছিল অফুরন্ত।

হয়ত এই কারনেই, মিশিগানে বসে সপ্তাহ শেষে ক্লান্ত হয়ে বাংলাদেশে আত্মীয়দের কাছেই প্রথম কল যায় — যত রাতই হক। বাংলাদেশের খেলার জন্য এখনও আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি। সিলেটের ছবি পেলে খুশি হয়ে আমার ইন্সটাগ্রাম সয়লাম করে দিই — গর্ব করে আমার মার্কিনি বন্ধুদের বলি “This beautiful place is where I grew up!”। শত শত ফ্রাস্ট্রেশনের পরও Sylhet & Bangladesh is where the heart is.

২০১৬ সালে একটা প্রজেক্টে বিমল দা নামে একজন তুখোড় অডিটোরের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল — ৫০০ একরের মতো জায়গার দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর আমার মতো অজ্ঞকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ছোটভাইয়ের মতো। তিনি ২০১৮ সালে আমার নিউ ইয়র্কে নতুন জব দেখে মেসেজে বলেছিলেন “দেশ ছেড়েছেন ভালো করেছেন ভাই”।

এখন মনে হয় — এতো ভালোবাসা, এতো মায়া ছেড়ে কেমন ভালোই বা ডিসিশন হইসে? দিনশেষে কখনই আমেরিকা হোম হবে না — টিলাগড়, ভানুগাছ ওইটাই হোম। সিলেটের জন্য ভালোবাসা, ইন শা আল্লাহ আগামী বছর দেখা হবে আবার। দলদলি চা বাগানে সাইকেল চালানো হবে, বাচ্চু টি স্টলে তর্ক হবে। রামপাশায় নামাজ পরা হবে, গোপালটিলায় ফুটবল খেলা হবে। আমানুল্লায়ে কারো বিয়ে খাওয়া হবে। অনেক মিস করি সবাইকে।

(লোকেট পড়া ছবির সাথে বাংলাদেশে ছোটবেলার কিছু ছবি শেয়ার করছি)

--

--

syedfromsylhet

The consumer to creator arc is taking longer than I care to admit